
শহিদ ইয়ামিনকে পুলিশ হত্যা করে নাই মর্মে তদন্ত রপোর্ট জমা দিয়েছে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। পুলিশের করা তদন্ত রপোর্ট অনুযায়ী শহিদ ইয়ামিন পুলিশের সাঁজোয়া যান এপিসির উপরে উঠে দাঁড়িয়ে ছিলো, তখন সন্ত্রাসীরা গুলি করে। তবে সন্ত্রাসীরা কারা, তাদের পরিচয় কী, এই বিষয়ে তদন্তে স্পষ্ট করা হয় নাই। পুলিশের এই তদন্ত নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আলোচনা হয়েছে, সেখানে তদন্তের ব্যাপারে পক্ষপাত করার অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশের সাঁজোয়া যান এপিসি থেকে ইয়ামিনের গুলিবিদ্ধ দেহ রাস্তায় ফেলে আতঙ্ক সৃষ্টি করে পুলিশ। সাভারের আশুলিয়া এলাকায় বর্বরোচিত ওই ঘটনা ঘটে। কোনোরূপ মৃত্যুর সনদ না দিয়েই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইয়ামিনের লাশ হস্তান্তর করে। ঢাকা ও সাভার রেঞ্জের পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইয়ামিনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা দায়ের না করতে ভয়ভীতি দেখান।
এর আগে নির্মম ওই হত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ ৭৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন শহীদ ইয়ামিনের মামা মো. আব্দুল্লাহ আল মুন কাদির। এরপর শুরু হয় তদন্ত।

প্রতিবেদনে পুলিশের সাক্ষ্যে বলা হয়েছে, ইয়ামিন এপিসি কারে উঠলে বাইরে থেকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে। এতে সে কারের (সাজোয়া যান) উপরে লুটিয়ে পড়ে। এএসআই মোহাম্মদ আলী ছাদ থেকে নামাতে গেলে হাত ফসকে পড়ে যায় ইয়ামিন।পরে পুলিশ ইয়ামিনকে চিকিৎসার জন্য রোড ডিভাইডারের উপর রেখে দেয়, যেনো ইয়ামিনকে জনগণ হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারে।
পুলিশের এই বক্তব্যের সাথে ভিডিও ফুটেজের কোনো মিল পাওয়া যায়নি। সেদিনের ভিডিও থেকে দেখা যায় এপিসির অবস্থান বদলে সাভারের রানা প্লাজা ও ভ্যাট অফিসের মাঝামাঝি এলাকায় আসে। তখন একজন পুলিশ সদস্য এপিসির ওপরের ঢাকনা খুলে ওপরে উঠে ইয়ামিনকে টেনে-হিচড়ে সড়কে ফেলে দেন। ওই সময় ইয়ামিনের পরনে ছিল একটি নেভি ব্লু রংয়ের ট্রাউজার এবং গায়ে অনেকটা খয়েরি রঙের জামা।

এপিসি থেকে তাকে ফেলে দেওয়া হলে তার দুই হাত দুই দিকে পড়ে। তাকে প্রথমে রোড ডিভাইডারের পাশে ফেলে দেন। এরপর আরও দুইজন পুলিশ সদস্য এপিসি থেকে নেমে তাকে মূল সড়ক থেকে টেনে সড়ক বিভাজকের ওপর দিয়ে সার্ভিস লেনে ফেলে দেয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র থেকে জানা গেছে, এই প্রতিবেদনের নির্ভুলতা ও সত্যতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এছাড়াও, তদন্ত করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা শুধু পুলিশ সদস্যদের বক্তব্য নিয়েছেন। তারা কোনো প্রত্যক্ষদর্শী জনগণ কিংবা সংবাদকর্মীর সাক্ষ্য নেননি, যা তদন্ত প্রক্রিয়াকে পক্ষপাতদুষ্ট ও অগ্রহণযোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করে।
তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তারা তদন্তকালে অপেশাদারসুলভ কর্মকাণ্ডসহ দায়িত্বে চরম অবহেলা করেছেন। এ প্রেক্ষিতে কমিটির তিন পুলিশ সদস্য তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পেশাদারিত্বের সঙ্গে পালন না করায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক শাখাকে অনুরোধ জানানো হলো।