মহাপরিচালক নাজমুল হকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ

ছবি: সংগৃহীত।প্রথমে পররাষ্ট্র সচিব, মাঝে রাশেদা রওনক ও ডানে মহাপরিচালক নাজমুল হক

গত আওয়ামী লীগ সরকারের আশির্বাদ পাওয়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বর্তমান মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ নাজমুল হক। তার পরিকল্পনায় বিভন্ন সময়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ কর্মরত ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত কর্মকর্তা এবং আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তাদের সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ দুতাবাসে পোস্টিং দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের ২১ ব্যাচের কর্মকর্তা আওয়ামী লীগ সরকারের দলীয় কট্টর সমর্থক নাজমুল হককে মহাপরিচালক (প্রশাসন) হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন অপসারিত পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। ৮ আগষ্ট ২০২৪ তারিখে রাতের আঁধারে নাজমুলকে মহাপরিচালক প্রশাসন হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। এই নিয়োগের পূর্বে নাজমুল আওয়ামী সরকারের সময়ে পরিচালক (সংস্থাপন) ও গোপনীয় এস এস এ শাখায় কর্মরত ছিলেন। 

নাজমুল হকের স্ত্রী রাশেদা রওনক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হয়েও আওয়ামী সরকারের লেজুড় বৃত্তির কারণে ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের এই শিক্ষক বিভিন্ন টকশোতে ২০১৮ সালে ও ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করে সরাসরি বিরোধিতা করেন।

তার স্ত্রী কোটা বিরোধী আন্দোলনে কোটা বহালের পক্ষে পত্রিকায় একাধিক কলাম লিখেছিলেন। এছাড়াও টকশোতে নিয়মিতভাবে ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে অযুক্তিযুক্ত কথা বলতেন। এক কলামে তাঁর একটি লাইন ছিলো এরকম, “যারা কোটা বিরোধীতা করছে এখন, বাতিল হলে ২০ বছর পরে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তের দিকে ফিরে তাকালে তাঁরা ভীষন লজ্জা পাবে’। 

নাজমুল হকের স্ত্রীকে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে এমনকী এনথ্রোপলজি বিভাগে ওই বছর যে প্রথম হয় তাকে বাদ দিয়ে আওয়ামী সুপারিশে এ নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এরপর তিনি আওয়ামী প্রভাব বিস্তার করে এবং টকশোতে আওয়ামী বন্দনা করে অদ্যবধি ৮ বছর ছুটি কাটিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগে এ বিষয়ে তদন্ত করলেই সব বের হয়ে আসবে। ইউটিউব এ গেলেই জনাব নাজমুল হকের স্ত্রীর আওয়ামী বন্দনার সকল ভিডিও পাওয়া যাবে।

 নাজমুল হকের বিরুদ্ধে বিএনপি পন্থী কর্মকর্তাদের যুদ্ধবিদ্ধস্ত ও দুর্গম জায়গায় পোস্টিং দিয়ে নানাভাবে হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের সময়ে পরিচালক (সংস্থাপন) থাকাকালীন বিএনপি পন্থী কর্মকর্তাদের যুদ্ধবিদ্ধস্ত লিবিয়াসহ দুর্গম জায়গায় পোস্টিং দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে নাজমুল হকের বিরুদ্ধে।

নাজমুল হকের বিরুদ্ধে জেদ্দায় কন্সাল্ জেনারেল থাকাকালীন দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ আছে। ০৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে ছাত্র বিপ্লবের পরপরই আওয়ামী পররাষ্ট্র সচিবের আদেশে যে সকল পদায়ন হয়েছে তাঁদেরকে দ্রুত ওই সকল গুরুত্বপূর্ণ মিশনে বদলি করতে জনাব নাজমুলের  ভূমিকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 ৫ই আগস্টের আগে আওয়ামী ফ্যাসীবাদের সুবিধা নিয়ে যাঁরা বিভিন্ন জায়গায় পদায়িত হয়েছিল তাদেরকে এখনো কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। যেমন নিউইয়র্ক  থেকে ফারুক হোসাইন কে টরন্টোতে,  প্রিতি রহমানকে ব্রাসেলস থেকে দিল্লিতে, আলামগীর হোসাইনকে লিসবন থেকে দিল্লিতে,  এমদাদকে জেনেভা ঢাকা নিয়ইয়র্ক এরকম আরো কিছু উদাহরণ আছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার দাবি অনুযায়ী  বদলির যে সঠিক নিয়ম তা বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে প্রশাসনে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা পরিচয় গোপন করে জানান, সরকারের উচিত এই সব পদায়নের বিষয়ে দ্রুত তদন্ত করা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে এমন ‘সমান্তরাল ফোর্স’ তৈরির পরিকল্পনা বন্ধ করা। বিশেষভাবে, নাজমুল হক এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে তদন্ত চালানো উচিত, যাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজের স্বচ্ছতা এবং দেশের স্বার্থ রক্ষা করা যায়।

এছাড়া, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাদের পদায়ন করা হয়েছে, তাদের বিষয়ে একাধিক সিকিউরিটি ভেরিফিকেশন প্রয়োজন। বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে যারা কাজ করছেন, তাদের প্রতি সরকারের আরও নজর রাখা উচিত।

নাজমুলের বিষয়ে বিভিন্ন অভিযোগ থাকলেও, পররাষ্ট্র সচিব এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নিতে ও বলতে অপারগ। কিসের ক্ষমতায় নাজমুল এত বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তা নিয়ে পরারষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রয়েছে নানা গুঞ্জন। শুনা যায় নাজমুল হকের স্ত্রী উর্ধতন কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করতে পারদর্শী।

মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যদি এসব অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হয়, তবে এটি সরকারের জন্য একটি বড় সংকট সৃষ্টি করতে পারে। সেই সাথে দেশের পররাষ্ট্রনীতির স্বচ্ছতা এবং জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।