নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা

বৈষম্যহীন, ন্যায্যতা এবং মেধার ভিত্তিতে একটি আদর্শ, মানবিক ও কল্যাণকর রাষ্ট্র গড়ে তোলার লক্ষ্য নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা এসেছে। গতকাল রবিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ধারণাপত্র ঘোষণা করা হয়। সভায় নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামিম কামাল। দুই শতাধিক অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে এই ঘোষণা এলো। কনসেপ্ট পেপারের ওপর আলোচনায় অংশ নেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দগণ। আলোচকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) সাব্বির আহমেদ, মেজর জেনারেল (অব.) শায়েকুজ্জামান, মেজর জেনারেল (অব.) মাহবুব, মেজর জেনারেল (অব.) ইসমাইল ফারুক চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) জাহিদ হোসেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা শওকত মাহমুদ, সাবেক মন্ত্রী নাজিম উদদীন, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার মিলন, সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর, মেজর (অব.) গোলাম সরোয়ার, অ্যাডভোকেট এ বি এম ওয়ালিউর রহমান বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স নেত্রী আয়েশা তাবাসসুম, শাকিল আমিন প্রমুখ।

সভায় নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ধারণাপত্রে বলা হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতাত্তোর আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামো – বৈষম্য, দুর্নীতি এবং অন্যায়-অবিচারে জর্জরিত। অতিমূল্যে অর্জিত স্বাধীনতায় মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে রাজনীতি ও বানিজ্য হয়েছে বিস্তর। প্রায় পাঁচ দশকে ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে জাতীয়স্বার্থ নির্লজ্জের মত বিক্রয় করেছে। বিভক্তি ও প্রতিহিংসার পাশবিকতায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ নিকৃষ্ট পর্যায়ে পৌঁছেছে। শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ জীবনযাত্রার যাবতীয় কাঠামো অনৈতিকতা ও পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত। বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং ভাগ্যের চাকা জীবনবাজী রেখে সচল রাখে অসহায় গরীব-অর্ধশিক্ষিত এবং অশিক্ষিত মানুষ। আর সেই কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে একটি তথাকথিত অসৎ, দুর্নীতিবাজ এবং দেশদ্রোহী শ্রেণি অর্থপাচার করে দেশ-বিদেশে সপরিবারে বিলাসী জীবনযাপন করছে। বাংলাদেশের সর্বক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মেধাভিত্তিক পরিবর্তন অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। গতানুগতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিশেষ কৌশলে এসবের সংস্কার করা অসম্ভব কিছু নয়। কোনো ব্যক্তি-গোষ্ঠী-দল-মহলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা আমাদের কাঙ্ক্ষিত দলের উদ্দেশ্য নয়।

প্রস্তাবিত দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সম্পর্কে বলা হয় আমেদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো সৎ, দূর্নীতিমুক্ত ও ন্যায্যতাভিত্তিক রাষ্ট্রীয় কাঠামো গড়ে তোলা, নৈতিকশিক্ষাকে ভিত্তি করে একমুখি আদর্শ শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করা, দারিদ্র‍্য বিমোচন ও ব্যাপক কর্মসংস্থানমুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করা। তাছাড়া ধর্ম- পেশা নির্বিশেষ সকল বাংলাদেশী নাগরিকের জন্য সমানাধিকার ও সমান সুযোগের ব্যবস্থা করা। কৃষি এবং তৈরী পোষাকশিল্পের পাশাপাশি উৎপাদনমুখি শ্রমিকবান্ধব ভারী শিল্পের প্রসার ঘটানো। দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। পরিবারতন্ত্র বা অলিগার্কি নিশ্চিহ্ন করে জনমুখি শাসনব্যবস্থা প্রণয়ন।

নতুন বাংলাদেশ গড়ার পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণাপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থায় মহাকৌশল প্রবর্তনের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। Way (পথ) Means (মাধ্যম/অস্ত্র) এবং Ends (কাঙ্খিত লক্ষ্য) ফর্মুলায় যদি মাধ্যম পরিবর্তন করা যায়, তবে আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যাবে। আমরা দেশের সকল জনগণ ও ভোটারের কাছে পৌছাতে না পারলেও পরোক্ষ পদ্ধতিতে (Indirect Approach) আমরা তিন শত আসনে ভালো মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারবো। এর উদ্দেশ্য হলো, ভবিষ্যতের সংসদে কয়েকজন সৎ, শিক্ষিত, দেশপ্রেমিক ভালো মানুষ (যে-কোনো পেশার হতে পারে) পাঠাতে পারলে অল্প সময়েই রাজনৈতিক নেতৃত্বে গুনগত পরিবর্তন আনা সম্ভব। প্রতি সংসদীয় আসনে একজন করে ভালো মানুষ খুঁজে বের করা কঠিন কিছু নয়। প্রার্থী নির্বাচন হবে এলাকাভিত্তিক এবং তৃণমূল পর্যায়ে। প্রার্থী নির্বাচনে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও কঠোরতা অবলম্বন করা আবশ্যক। দলে একজনও অসৎ, দুর্নীতিপরায়ণ, দলবাজ, ক্ষমতালোভী মানুষ যেন প্রার্থী হতে না পারে। এতে যদি দশটি আসনেও প্রার্থী দিতে হয় তাই হবে কিন্তু প্রার্থীর যোগ্যতার ক্ষেত্রে কোনো আপস করা হবে না। ইস্পাতকঠিন নীতিবোধসম্পন্ন, সৎ, শিক্ষিত, দেশপ্রেমিক এবং জনদরদী অল্প কজন মানুষই ন্যায্যতাভিত্তিক দেশ গঠনে পাঞ্জেরী হয়ে কাজ করবেন।
নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ধারণাপত্রে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কার্যকর করার পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়- জওয়ান (সৈনিক ব্যাপক অর্থে অফিসারসহ সকল পদবীর সৈনিক) এবং নওজোয়ান (নবীন প্রজন্ম, জেন-জি) এর অমিত শক্তির সমন্বয় করে দেশপ্রেমের দ্রোহে প্রজ্জ্বলিত হয়ে আলোকিত আগামীর বাংলাদেশ গড়ার সংশপ্তক প্রতিজ্ঞা করতে হবে। একদিকে সকল পদবীর জওয়ানদের স্থানীয় থেকে জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব গ্রহণ করতে হবে এবং নওজোয়ানদের ২৪-এর বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করে বৈষম্যহীন ও ন্যায্যতাভিত্তিক বাংলাদেশ গঠনে নেতৃত্বের গুরুদায়িত্ব নিতে হবে।

ধারণাপত্রে সংস্কার ও মৌলিক পরিবর্তন বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বন্ধুভাবাপন্ন দেশের সাথেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন ও রক্ষা করার কথা ঘোষণা করা হয়। সকল প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ন্যায্যতা ও পারস্পারিক সহযোগিতার মূলনীতি অনুসরণ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।

শিক্ষানীতির বিষয়ে বলা হয়- আধুনিক, নৈতিক এবং বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা যা মূলত একমুখি শিক্ষাব্যবস্থা অর্থাৎ প্রত্যেক বাংলাদেশীকে বাংলা মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা।

স্বাস্থ্যনীতি বিষয়ে বলা হয়, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা প্রদান বাধ্যতামূলক। স্বাস্থ্যসেবাকে মানসম্মত করা- যেন উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে না হয়।

এর বাইরে জনকল্যাণকর ও সেবামুখি জনপ্রশাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা, আধুনিক ও মানবিক পুলিশব্যবস্থা গড়ে তোলার ঘোষণাও দেওয়া হয়।