
গবেষণা বলছে, ১৮ মাস বয়স থেকে ৫ বছর অবধি, শিশু যদি ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিভি দেখতে থাকে, তা হলে তার বুদ্ধির বিকাশ থমকে যাবে। সমস্যা আসবে ভাষাতেও। বাবা-মায়েরা জেনে রাখুন।টিভি দেখা শিশুর জন্য একেবারেই স্বাস্থ্যকর নয়। এমনটাই দাবি একাধিক গবেষণায়। অনেক মা-বাবাই বলবেন যে, খুদে টিভি চালিয়ে কার্টুন দেখে বা ছোটদের কোনও অনুষ্ঠান দেখে। কিন্তু গবেষণা বলছে, ১৮ মাস বয়স থেকে ৫ বছর অবধি শিশু যদি ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিভি দেখতে থাকে, তা হলে তার বুদ্ধির বিকাশ থমকে যাবে। সমস্যা আসবে ভাষাতেও।এ দেশে ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ’-এর জার্নালে এই নিয়ে একটি গবেষণাপত্র ছাপা হয়েছে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, ৮৭২ জন শিশুকে নিয়ে একটি সমীক্ষা করে দেখা হয়, ৬ মাস, ১ বছর ও ২ বছর বয়সি শিশুরা যদি দিনে ৩ ঘণ্টারও বেশি টিভি দেখে, তা হলে তাদের মধ্যে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। যেমন, শিশুরা খেলাধুলা ছেড়ে ঘুরকুনো হয়ে পড়ে, অন্যের সঙ্গে কথোপকথনে সমস্যা হয়, এমন কিছু ভাষা শেখে যা তাদের বয়সোচিত নয় এবং তাদের বুদ্ধি, ভাবনাচিন্তা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে।টিভি দেখলে মনঃসংযোগ ও ধৈর্য, দুই-ই নষ্ট হয়। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, যে শিশু বেশি টিভি দেখে তার পড়াশোনায় মনোযোগ কমে যায়, সৃজনশীল ভাবনাও বাধাপ্রাপ্ত হয়। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যারা বেশি ক্ষণ টিভি দেখে তাদের ঘুমের সমস্যাও বেশি হয়। টিভি থেকে বেরোনো আলো মেলাটোনিন নামক হরমোন ক্ষরণে বাধা দেয়। এই হরমোনের তারতম্য হলে ঘুম কমে যায়, অনিদ্রার সমস্যা দেখা দেয়, এমনকি ব্যবহারেও বদল আসতে পারে। উদ্বেগ ও অস্থিরতা প্রচণ্ড রকম বেড়ে যেতে পারে।
কোন বয়সের শিশু কত ঘণ্টা টিভি দেখলে কী ক্ষতি হয়, তারও একটা হিসাব রয়েছে। এই নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছে ‘আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিকস’। সেখানকার গবেষকেরা জানিয়েছেন—
শিশুর বয়স ১৮ মাস বা তার কম হলে টিভি দেখাই উচিত নয়। ভিডিয়ো কলে শিশু মা, বাবা বা পরিবারের কাউকে দেখতে পারে, তবে আর অন্য কোনও বৈদ্যুতিন ডিভাইস তার সামনে রাখা যাবে না।
১৮ মাস থেকে ২ বছর অবধি দিনে আধ ঘণ্টা টিভি দেখতে পারে শিশু, তার বেশি নয়। এর বেশি ক্ষণ টিভির পর্দায় চোখ রাখলে শিশুর বুদ্ধির সার্বিক বিকাশ ব্যাহত হবে।
২ থেকে ৫ বছর অবধি দিনে ১ ঘণ্টা টিভি দেখা যেতে পারে, তবে তা শিক্ষামূলক কোনও অনুষ্ঠান হতে হবে। শিশু টিভি দেখার সময়ে পাশে অভিভাবককে থাকতে হবে।
শিশুর টিভি দেখার নেশা ছাড়াতে হলে অভিভাবকদেরই উদ্যোগ নিতে হবে। নিজের টিভি দেখার নেশা থাকলে সেটাও ঝটপট কমিয়ে ফেলুন। আপনার প্রিয় কোনও অনুষ্ঠান দেখতে হলে, মোবাইল, ট্যাবে দেখুন। টিভি দেখার সময়টুকু খেলাধুলা বা পছন্দের সৃজনশীল বিষয় শিখতে ভর্তি করে দিন অথবা আপনারাই শিশুকে সঙ্গ দিন। তাতেও অনেকটা কাজ হবে।