তামাক বিক্রয়কেন্দ্র নিয়ে তামাকজাত কোম্পানির মিথ্যাচার

বাংলাদেশে তামাকজাত পণ্য বিক্রয়কেন্দ্রের প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণে জরিপের ফলাফল প্রকাশ নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ সংবাদ সম্মেলন করে গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটি।

তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সম্প্রতি পরিচালিত এক জরিপে প্রকাশ পেয়েছে যে, দেশের মোট বিক্রয়কেন্দ্রগুলোর মাত্র ১৮.৫% তামাকজাত পণ্য বিক্রয় করে, এবং ২.৪% বিক্রয়কেন্দ্র শুধুমাত্রই তামাকজাত পণ্য বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত। জরিপটি পরিচালনা করেছে গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটিসহ একটি সংগঠন।

জরিপের মাধ্যমে ঢাকা শহরের ১৩টি ওয়ার্ডের ২৬১৬টি বিক্রয়কেন্দ্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়, যেখানে দোকানের ধরন, অবস্থান ও তামাকজাত পণ্য বিক্রয়ের হার বিশদভাবে বিশ্লেষণ করা হয়। গবেষণার মূল ফলাফল: শুধুমাত্র ৬৩,৬০৩টি প্রতিষ্ঠান একমাত্র তামাকজাত পণ্য বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত, যেখানে ১,২৬,৩৫৮ জন ব্যক্তি একমাত্র তামাক বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। জরিপ অনুযায়ী, আনুমানিক ৪,৯০,২৭৩টি প্রতিষ্ঠান তামাকজাত পণ্যের সঙ্গে যুক্ত, যেখানে ৯,৭৪,০০৬ জন ব্যক্তি অন্য পণ্যের পাশাপাশি তামাকজাত দ্রব্যও বিক্রি করে।

হকার ও ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের মাধ্যমে তামাকজাত পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা হলে ৫৮,৩০৩ থেকে সর্বোচ্চ ১,২৬,৩৫৮ মানুষের জীবিকার ওপর প্রভাব পড়তে পারে। তবে, তাদের বিকল্প লাভজনক পণ্য বিক্রির সুযোগ উচ্চ মাত্রায় বিপণন ও ক্রেতার সাথে যোগাযোগের দক্ষতা রয়েছে। তামাক কোম্পানী ও তামাক কোম্পানীর স্বার্থসংলিষ্টরা এই বলে অপপ্রচার চালাচ্ছেন যে, তামাক আইনের প্রস্তাবিত সংশোধোন অনুযায়ী ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের সিগারেট বা তামাকজাতীয় পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা হলে, আলাদা শলাকা বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে, (অর্থাৎ খুচরা দোকানিকে পুরো প্যাকেট বিক্রি করতে হবে), সিগারেট বিক্রেতাদের স্থানীয় সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূল করা হলে, বিক্রয়কেন্দ্রে সিগারেটের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হলে, চায়ের দোকানকে উন্মুক্ত স্থান হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে সেখানে ধুমপান নিষিদ্ধ করা হলে এবং এসব আইন বাস্তবায়ন করা হলে নিম্ন আয়ের প্রায় ১৫ লাখ খুচরা বিক্রেতাসহ তাদের পরিবারের আরও প্রায় ৫০ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

অথচ আমাদের বিজ্ঞানসম্মত গবেষণা পদ্ধতি প্রয়োগে প্রাপ্ত গবেষণা তথ্য বলছে যে মাত্র ৫৮,৩০৩ জন মানুষের জীবিকায়। প্রভাব পড়তে পারে যা তামাক কোম্পানী ও তামাক কোম্পানীর স্বার্থসংলিষ্টদের দাবীকৃতি সংখ্যার চেয়ে ত্রিশ ভাগের এক ভাগ মাত্র। অতএব, এসব মিথ্যা তথ্যের উপর ভিত্তি করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় উপদেষ্টাগণ।

গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটির নির্বাহী পরিচালক একেএম মাকসুদ বলেন, “তামাক ব্যাবসার সঙ্গে কর্মসংস্থানের যে অতিরঞ্জিত দাবি করা হয়, এই গবেষণা তার বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে। তামাক বিক্রয় কমিয়ে এনে স্বাস্থ্যসম্মত বিকল্প পণ্যের দিকে ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করা গেলে, কর্মসংস্থানের ওপর উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। এই গবেষণার ফলাফল তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা আরও শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।