শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য সংবাদ সম্মেলন

দেশের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হল বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক (সারাবো, কাশিমপুর, গাজীপুর)। সেখানে ৪০/৪২ হাজার শ্রমিক কর্মচারী কর্মরত ছিলেন। ৫ আগস্ট ২০২৪  হাসিনা রেজিমের পতনের পর সালমান এফ রহমানকে জেলে নেওয়া হয়। সে বর্তমানে কারাবন্দি আছে। 

সংবাদ সম্মেলনে গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোশরেফা মিশু লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমাদের পরিষ্কার বক্তব্য, সালমান এফ রহমানের সর্বোচ্চ শান্তি চাই আমরা বেক্সিমকোর শ্রমিক কর্মচারীগণ। বেক্সিমকো দেশের সর্ববৃহৎ শিল্প গ্রুপ। দেশের রপ্তানী আয়ে এই শিল্প গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। কিন্তু গত ৬ মাস যাবৎ এই শিল্প গ্রুপের শ্রমিক কর্মচারীগণ কি রকম মানবেতর জীবনযাপন করছেন আপনারা তা জানেন। 

দুর্নীতিবাজ মাফিয়া সালমানের অপরাধের দায় বেক্সিমকোর শ্রমিক কর্মচারীরা নেবে কেনো?। আমরা পরিষ্কারভাবে মনে করি বেক্সিমকোর সমস্যার একটা স্থায়ী সমাধান জরুরী। এই লক্ষ্যে শ্রমিক কর্মচারীগণ ১৪ই জানুয়ারি ২০২৫, একটি শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন। 

এর ধারাবাহিকতায় ২১ জানুয়ারি সানসিটি মাঠে ৩০ সহস্রাধিক শ্রমিক কর্মচারীর একটি শান্তিপূর্ণ শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেই সমাবেশে বেক্সিমকো সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে, সরকারের উদ্দেশ্যে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম ঘোষণা করা হয়। 

এই সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে মোশরেফা মিশুর সাথে ফোনে যোগাযোগ করেন শ্রম সচিব মহোদয়। তিনি বলেন সরকার শ্রমিক কর্মচারীদের সাথে আলোচনা করে এই বিষয়ের স্থায়ী সমাধান করতে চায়। মোশরেফা মিশু শ্রম সচিব মহোদয়কে বলেন ২২ তারিখে ফোন করলে, সেটা সরাসরি উপস্থিত শ্রমিক কর্মচারীদের শোনানো হবে। ফলে তাদের মধ্যে আর সন্দেহ সংশয় থাকবে না।

 ২২ জানুয়ারি সান সিটি মাঠে সমাবেশ চলাকালীন শ্রম সচিব মহোদয় ফোন করলে তার বক্তব্য মাইক্রোফোনে শোনাবার সময় হঠাৎ কেউ মাইক্রোফোনের তার কেটে দেয়। বারবার চেষ্টা করেও শ্রম সচিব মহোদয়ের বক্তব্য উপস্থিত শ্রমিক কর্মচারীদের শোনানো যায়নি। যে বা যারা এটা করেছে তারা যে বেক্সিমকোর শ্রমিক কর্মচারীদের মঙ্গল চায় না এটা খুব পরিষ্কার। 

কোনভাবেই মাইক্রোফোনে শ্রম সচিব সাহেবের কথা শ্রমিকদের শোনাতে না পাড়ায় তাৎক্ষণিকভাবে মঞ্চে উপস্থিত শ্রমিক কর্মচারীদের সাথে কথা বলে, শ্রম সচিব সাহেবের প্রস্তাব অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হয় যে, পরদিন ২৩ জানুয়ারি সকাল ১১টায় সরকারের সাথে আলোচনায় বসতে যাবেন শ্রমিকদের ৬ জন, কর্মচারীদের ৪ জন এবং গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও আশুলিয়া থানা কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলম। সিদ্ধান্তের কথা শ্রম সচিব সাহেবকে জানিয়ে দেয়া হয়। 

 কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হল, এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাথে সাথেই বাঁশের লাঠি হাতে একদল বহিরাগত হামলা করে। তবে হামলার জন্য পুলিশ ঐদিনই মধ্যরাতে গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের আশুলিয়া থানার সভাপতি খোরশেদ আলমকে গ্রেফতার করে। আরো কিছু নিরপরাধ শ্রমিককে গ্রেফতার করে দ্রুত বিচার আইনের মামলা ও সরকারি কাজে বাধা প্রদানের মিথ্যা মামলা দায়ের করা হলো। তাদেরকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে রাখা হয়েছে। বারবার জামিনের আবেদন করলেও এখনো তাদের জামিন হয় নাই। 

আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে মিথ্যা মামলায় পুলিশের এই গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সরকারের সাথে আলোচনা করে আমরা বেক্সিমকো শ্রমিক কর্মচারীদের পক্ষে ৩ দফা দাবি উত্থাপন করি। 

 ১। বেক্সিমকোকে রাষ্ট্রায়াত্ব খাতে অধিগ্রহণ করা হোক।

 ২। তা না হলে বেক্সিমকোকে অন্য কোন গ্রুপ অব কোম্পানির সাথে মার্জার করা হোক। 

 ৩। তাতেও যদি সরকার সম্মত না হয়, তাহলে আমাদের সর্বশেষ প্রস্তাব ও দাবি হচ্ছে, শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিক কর্মচারীদের সমস্ত দেনা পাওনা ও ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হোক।