কালীগঞ্জে বিএনপি-কর্মীদের ওপর দুই দফা হামলার ঘটনায় পুলিশ ছাত্রদলের ৬ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। রোববার (১৬ মার্চ) ভোররাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, কালীগঞ্জ সরকারি শ্রমিক কলেজ শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ভাদার্ত্তী গ্রামের মোশারফ হোসেনের ছেলে আবুল হোসেন প্রিন্স (২৫), ছাত্রদল কর্মী ভাদার্ত্তীর নয়ন মিয়ার ছেলে হৃদয় মিয়া (২৪), মুনসেফপুর এলকার আমির হোসেনের ছেলে তরিকুল ইসলাম (১৯), আনোয়ার হোসেনের ছেলে আরাফাত রহমান রিয়ান (১৯), সুমন মিয়ার ছেলে চয়ন মিয়া (১৮) এবং শফিকের ছেলে সিহান হোসেন (১৮)।
স্থানীয় ও থানায় দায়ের করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায় পৌরসভার বালীগাঁও উত্তরপাড়া বাইতুল আমান জামে মসজিদে শুক্রবার জুমার নামাজে ইমাম সুদের বিরুদ্ধে বয়ান করেন। সে সময় স্থানীয় হরমুজের ছেলে খোকন (৫৫), সোহেল (৪৮), সুমনসহ (৪৮) কয়েকজন ইমামের সাথে তর্কে লিপ্ত হন। এরপর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল। শনিবার (১৫ মার্চ) মসজিদের সভাপতি স্থানীয় ৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি গোরজার হোসেন (৪৩) আসরের নামাজের পর বাড়ি ফেরার পথে খোকনের নেতৃত্বে তার পক্ষের লোকজন গোলজারের কাছে জানতে চান কেন তিনি ইমামের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি এবং ইমামের পক্ষ নিয়ে কথা বলছে। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে খোকন গ্রুপ গোরজারের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তাকে বাঁচাতে আসা তার স্বজনদেরও মারধর করা হয়। পরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়।
বিকালে আহত বিএনপি নেতা গোলজার হোসেন চিকিৎসা নিতে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। কিছুক্ষণ পর প্রতিপক্ষের লোকজনও সেখানে হাজির হয়। সে সময় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হলে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হয়। একপর্যায়ে খোকন গ্রুপ কালীগঞ্জ সরকারি শ্রমিক কলেজ শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক প্রিন্সকে খবর দেয়। ইফতারের ঠিক আগ মুহূর্তে প্রিন্সের নেতৃত্বে ছাত্রদলের ১০-১৫ জনের একটি দল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন বিএনপি নেতা গোলজার ও তার সঙ্গে থাকা বিএনপি কর্মী হাবিবুল্লাহ, শামীম, সিরাজ মিয়া, আক্তার ও মোক্তারের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলার আতঙ্কে জরুরি বিভাগের কর্মরত সবাই নিরাপদ স্থানে চলে যান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে জরুরি বিভাগে পুনরায় চিকিৎসাসেবা শুরু হয়।
এ ঘটনায় রাতেই উভয় পক্ষ থানায় পৃথক অভিযোগ দায়ের করে। রোববার ভোররাতে অভিযান চালিয়ে ছাত্রদল নেতা প্রিন্সসহ তার সহযোগী ছাত্রদলের আরো ৫ কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে রোববার সকাল ৯টার দিকে থানা থেকে তাদের ছাড়িয়ে নিতে থানার প্রধান ফটকের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। প্রায় ১ ঘণ্টা থানার সামনে অবস্থান করার পর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে পিছু হটে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শামিমা বলেন, “জরুরি বিভাগে রোগীদের চিকিৎসা চলাকালে হামলা হয়। আমরা তখন নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে থানায় খবর দেই। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।”
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. ইমরান খান বলেন, “রোগীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হলে তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং তদন্ত শুরু করে। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। হামলার কারণে চিকিৎসাসেবা বিঘ্নিত হলেও বর্তমানে তা স্বাভাবিক রয়েছে।”
কালীগঞ্জ পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম প্রধান বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত একটি ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রদল নেতা হাসপাতালে তার বন্ধুর বাবাকে দেখতে গিয়েছিল। কিন্তু হাসপাতালে ভেতরে সংঘর্ষে তার জড়িত থাকার পক্ষে এখনো পর্যন্ত কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রশাসনের পাশাপাশি আমরাও দলীয়ভাবে বিষয়টি অনুসন্ধান করছি। হাসপাতালে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়াও সংঘর্ষে জড়িত উভয় পক্ষ সমঝোতার বিষয়ে একমত হয়েছে।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলাউদ্দিন জানান, ভোররাতে অভিযান পরিচালনা করে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।