ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনাক্তকরণে বাচাই পক্রিয়া চলছে, এমনকি মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট নিয়ে যারা সরকারি চাকরি পেয়েছেন তাদেরও যাচাই-বাছাই চলছে। এই কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে, মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকারের কাছ থেকে সনদ নিয়েছেন, এমন অন্তত ১২ ব্যক্তি সনদ ফিরিয়ে দিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। তারা স্বেচ্ছায় নিজেদের ভুল স্বীকার করে আবেদন করেছেন। এতে প্রমাণিত হয় যে গত আমলে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেওয়া হয়েছিলো।
তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়ে অবসরে যাওয়া এক ব্যক্তি। এক ব্যক্তি তাঁর আবেদনে সনদ নেওয়া ভুল হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন কেউ কেউ। লিখেছেন—‘আমি লজ্জিত’।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানা গেছে।মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, সনদ ফেরত দিতে আবেদন করা ব্যক্তিদের নাম–পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হয়নি। কর্মকর্তারা বলছেন, যেহেতু মন্ত্রণালয়ের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাঁরা আবেদন করেছেন, নাম প্রকাশ করলে তাঁরা সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হবেন। এ কারণে তাঁদের নাম গোপন রাখা হচ্ছে।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম গত ১১ ডিসেম্বর নিজ দপ্তরে এক অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও যাঁরা সনদ নিয়েছেন, তাঁদেরকে সনদ ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
একই অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা উপদেষ্টা আরও বলেছিলেন, মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও অনেকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম লিখিয়েছেন, গেজেটভুক্ত হয়েছেন এবং সুবিধা নিয়েছেন। এটি জাতির সঙ্গে প্রতারণার শামিল। এটি ছোটখাটো অপরাধ নয়, অনেক বড় অপরাধ।
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা একটি ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) দেব, যাঁরা অমুক্তিযোদ্ধা আছেন, তাঁরা যাতে স্বেচ্ছায় এখান থেকে চলে যান। যদি যান, তাঁরা তখন সাধারণ ক্ষমা পেতে পারেন। আর যদি সেটি না হয়, আমরা প্রতারণার দায়ে তাঁদের অভিযুক্ত করব। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতারণার দায়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মুক্তিযোদ্ধা উপদেষ্টার আহ্বানের পর ১২ জন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সদন ফেরত দিতে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন।
মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, একজন তাঁর আবেদনে নিজের নাম–পরিচয় দিয়ে লিখেছেন, ‘আমি মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও প্রলোভনে পড়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে সরকারের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা নিয়েছি। এ অনৈতিক কাজের জন্য আমি লজ্জিত। আমি স্বেচ্ছায় এ সনদ ফেরত দেওয়ার আবেদন করেছি।’
এর আগে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেওয়ায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পাঁচ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সনদ বাতিল করা হয়। তাঁরা হলেন সাবেক সচিব কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী, মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান, নিয়াজ উদ্দিন মিয়া, এ কে এম আমির হোসেন ও যুগ্ম সচিব আবুল কাসেম তালুকদার। এই সনদ ব্যবহার করে চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর অভিযোগ ছিল তাঁদের বিরুদ্ধে।
এদিকে ৯০ হাজার সরকারি কর্মচারীর মুক্তিযোদ্ধার সনদ যাচাইয়ের কাজ চলছে। মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, ৪০ হাজারের মতো সনদ যাচাই শেষ হয়েছে, বাকীগুলো দ্রুত সময়ে শেষ করে চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি করে সরকারের কাছে জমা দেওয়া হবে।