আলফাডাঙ্গা পৌরসভার সেবা বঞ্চিত প্রায় ১৫ হাজার মানুষ

আলফাডাঙ্গা পৌরসভার নাগরিকরা যাবতীয় হোল্ডিং করসহ অন্যান্য পৌরকর নিয়মিত পরিশোধ করলেও অদ্যাবধি প্রতিশ্রুত নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পায়নি।

প্রায় ৯ বছর পার হলেও এলাকার ভাঙা রাস্তাঘাট, সুপেয় পানির অভাব, অপরিমিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা। নেই ডাস্টবিন, সড়কে নেই পর্যাপ্ত লাইটিং ব্যবস্থা, বাজার ছাড়া এলাকাভিত্তিক কোথাও কোনো নাইট গার্ড নেই, মূল বাজারের বাইরে কোথাও নেই সিসি ক্যামেরা, অপরিকল্পিত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে প্রায় ১৫ হাজার পৌরবাসী।

নাজমা ক্লিনিকের মালিক হারুনুর রশীদ বলেন, আমার ৩ তলা ভবনটির হোল্ডিং ট্যাক্স বসানো হয়েছিল ৭৮,০০০ টাকা। এরপর তা আবার দরকষাকষির মাধ্যমে কমিয়ে ৪,০০০ টাকায় আনা হয়। প্রথম ৫ বছর এভাবেই কেটেছে। ২য় নির্বাচনে নতুন মেয়র ক্ষমতায় আসলে তার নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী তিনি ১ম বছরের জন্য ব্যক্তিগত তহবিল থেকে সবার হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করেন। ৫ আগস্টের পর মেয়র ক্ষমতাচ্যুত হলে প্রশাসক কর্তৃক তা আগের মতো ৭৮,০০০ টাকা ট্যাক্স নির্ধারণ করে দরকষাকষির মাধ্যমে ২৫,০০০ টাকার দাবি করে বসে আছে।

জাতীয় সনদপত্র, ট্রেড লাইসেন্স, জন্মনিবন্ধন, মৃত্যুসনদ, ওয়ারিশ সনদপত্র পেতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পৌরবাসীকে। পৌরসভা এমন ফাঁদ পেতে বসেছে যে, হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ না করা পর্যন্ত এ সব সেবা থেকে বঞ্চিত থাকবে পৌরবাসী। সেবার পরিবর্তে বেড়েছে জমি ও বাড়ির কর। পৌরসভার ভেতরে জমির খাজনা প্রতি শতকে ১৫ টাকা ধার্য করা হয়েছে। কাগজে-কলমে পৌর নাগরিকদের ১০ থেকে ১৫ ধরনের সেবা পাওয়ার কথা থাকলেও তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না তারা।

এখানে মোট ৯টি ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আলফাডাঙ্গা পৌরসভার ৬, ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড বাজার এলাকায় থাকাতে সামান্য সুবিধা পেলেও ১, ২, ৩, ৪, ৫ এবং ৯ ওয়ার্ডের জনগণ সব সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বর্তমানে কাউন্সিলর না থাকায় স্থবির হয়ে আছে কার্যক্রম। জন্মনিবন্ধন সনদসহ গুরুত্বপূর্ণ সেবা না পেয়ে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নাগরিকদের। প্রতিদিনই কাউন্সিলর অফিসে গিয়ে সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের।

ছাত্র আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের সব সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় মেয়রদের পাশাপাশি অপসারণ করা হয় কাউন্সিলরদেরও। এরপর থেকে আরও ব্যাহত হচ্ছে নাগরিক সেবা। একজন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হলেও তিনি সপ্তাহে মাত্র ২ দিন আসেন, এতে করে অফিসে জমে থাকা জন্মনিবন্ধন, ওয়ারিশ সার্টিফিকেট, মৃত্যু সনদ ও অন্যান্য জরুরি কাগজপত্র পেতে পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে।
৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ব্যাংকার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, পৌরসভা হওয়ায় আমাদের অনেক খরচ বেড়েছে, কিন্তু আয় এবং সেবা বাড়ে নাই, আগেই ভালো ছিলাম। যথাসম্ভব পৌরসভা প্রশাসন থেকে আমরা মুক্তি পেতে চাই।

৪ নম্বর ওয়ার্ডের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, সাবেক এমপি নিজে মরেছে, আমাদেরকেও মেরেছে। কী দরকার ছিল পৌরসভার? স্বল্প আয়ের ওপর থেকে এত কর-খাজনা কীভাবে দেব বুঝতে পারছি না। ২ টাকার খাজনা এখন ১৫ টাকা দিতে হচ্ছে। পৌরসভার আগেই আমরা অনেক ভালো ছিলাম, আমরা এখন এ পৌরসভা থেকে পরিত্রাণ চাই। শোনা যাচ্ছে, সরকার বিভিন্ন এলাকায় পৌরসভা বাতিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আশা করি, এর সঙ্গে আলফাডাঙ্গা পৌরসভাও বাতিল করা হোক।

উল্লেখ্য যে, পাকিস্তান আমলে আলফাডাঙ্গা থানা গঠিত হয় মাত্র ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে। এরশাদ সরকারের সময় বিভিন্ন এলাকায় থানাগুলোকে উপজেলা ঘোষণা দেওয়া হলেও এটা অত্যন্ত ছোট থানা বলে তা সম্ভব হয়নি এবং একে ‘উন্নীত থানা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।