বুধবার বিকেল তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন ছাত্রসংগঠনের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটি ঘোষণার কথা ছিল। তার আগেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে কমিটিতে একাধিক পদে নাম না থাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা স্লোগান দিতে থাকে মধুর ক্যানটিনের সামনে।
আধঘণ্টা স্লোগান দেওয়ার পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মধুর ক্যানটিনের সামনে থেকে চলে যান। তাঁরা চলে যাওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশটি ক্যানটিনের সামনে ‘শিক্ষা ঐক্য, মুক্তি মুক্তি’, ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’ বলে স্লোগান দেন। তাঁরা সংবাদ সম্মেলন শুরু করার প্রস্তুতি নিলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আবার স্লোগান দিতে থাকে, প্রাইভেট ছাড়া কমিটি, মানি না মানব না’ এবং ‘ঢাবির সিন্ডিকেট, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’।
মধুর ক্যানটিনের সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে সেখানে ধস্তাধস্তি হয়। পরে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি লেগে যায়, কেউ কেউ মানিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি ঠান্ডা করে।
এমন উত্তেজনার মধ্যেই মধুর ক্যানটিনে সাংবাদিকদের সামনে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমিটি ঘোষণা করা হয়।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে আবু বাকের মজুমদার, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক পদে তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম, সদস্যসচিব পদে জাহিদ আহসান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব পদে রিফাত রশীদ, মুখ্য সংগঠক হিসেবে তাহমিদ আল মুদাসসির চৌধুরী ও মুখপাত্র পদে আশরেফা খাতুনের নাম ঘোষণা করা হয়।
নতুন ছাত্রসংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির আহ্বায়ক পদে আব্দুল কাদের, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক পদে লিমন মাহমুদ হাসান, সদস্যসচিব পদে মহির আলম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব পদে আল আমিন সরকার, মুখ্য সংগঠক পদে হাসিব আল ইসলাম ও মুখপাত্র পদে রাফিয়া রেহনুমা হৃদিকে মনোনীত করা হয়।
কমিটি ঘোষণার পর বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে মধুর ক্যানটিনের পশ্চিম পাশের ফটক দিয়ে মিছিল বের করেন নতুন কমিটির পক্ষের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, জিন্দাবাদ, জিন্দাবাদ’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন। মিছিলটি আইবিএর (ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট) সামনের সড়ক দিয়ে অগ্রসর হয়।
এই সময়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মধুর ক্যানটিনের সামনে, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট করে প্রাইভেটকে মাইনাস করে দিচ্ছে’ বলে স্লোগান দেওয়া শুরু করে, ‘ঢাবির সিন্ডিকেট, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’।
কমিটির পক্ষের নেতা-কর্মীদের মিছিলটি সামনে অগ্রসর হলে মল চত্বর এলাকায় প্রথম দফায় দুই পক্ষের মারামারি হয়। এরপর ক্যাম্পাসে উত্তেজনা তৈরি হয়।
সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আরেক দফা মারামারি হয়। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারামারি থামানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়।
ঘটনাটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনা চলছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা লিখেছেন, ‘পুরান রাজনৈতিক বন্দোবস্ত…। ঢাবির পক্ষে আর রাজনৈতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্তর থেকে উত্তরণ সম্ভব হলো না। ঢাবির ঐতিহাসিক পরাজয়।’