রাষ্ট্রদূত নাহিদার গোপন বৈঠক বিএনপি নেতার বাসায়

কানাডা বিএনপির সদস্যরা ও বাংলাদেশী প্রবাসীরা জুলাই বিপ্লবের পরে বিতর্কিত রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহানকে কানাডাতে নিয়োগ দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। যদিও তখন দেশ অস্থিতিশীল ছিল, তাই তার নিয়োগের সময়ে দেশের ভেতরে তেমন প্রতিবাদ হয় নাই। কিন্তু কানাডার প্রবাসী বাংলাদেশিরা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ছিলো এই নিয়োগের বিরুদ্ধে।

উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে কানাডা বিএনপি নেতারা বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকনের শরণাপন্ন হন। বিষয়টি জানানো হয় পররাষ্ট্র সচিব ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নাহিদা সোবহান দেশে এসে পররাষ্ট্র সচিবকে ম্যানেজ করতে সক্ষম হন। নাহিদাকে বলা হয় লিখিত ব্যাখ্যা দিতে। এরপর কানাডা ফিরেই বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সমঝোতা করতে মরিয়া হয়ে উঠেন নাহিদা।

অটোয়া ও টরন্টোর একাধিকি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকনের সঙ্গে সমঝোতা করেন নাহিদার স্বামী কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নজরুল ইসলাম। খোকনের মধ্যস্থতায় কানাডা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেন নাহিদা। 

সূত্র বলছে, বিএনপি নেতাদের খুশি করতে হাইকমিশনার ‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই’ স্লোগানে ১৮ জানুয়ারি সকাল ১০টায় টরন্টোর আলবার্ট ক্যাম্পবেল পাবলিক লাইব্রেরিতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সরকারি অর্থের এই অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য নাহিদা দায়িত্ব দেন তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু পিসের নির্বাহী পরিচালক ইনামুল হককে।

নাহিদা গোপন বৈঠক করেন কানাডা পশ্চিম বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের বাসায়, করেন নৈশভোজ।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এসব করেছেন পল্টিবাজ হাইকমিশনার নাহিদা। আর এসব তিনি করেছেন টরন্টো কনস্যুলেটের কনস্যাল জেনারেল ফারুক হোসাইনকে অন্ধকারে রেখে। এমনকি হাইকমিশনের অনুষ্ঠানে যেতে দেওয়া হয়নি ফারুক হোসাইনকে। বিষয়টি এখন টক অব দ্যা টরন্টো।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অতিপ্রিয় ও বিশ্বস্ত কূটনীতিক নাহিদা সোবহানকে গত ২৮ মে জর্ডান থেকে কানাডা পোস্টিং দেওয়া হয়। 

এর আগে দীর্ঘ নয় বছর ধরে জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে নিযুক্ত ছিলেন আওয়ামী লীগের দলবাজ নাহিদা সোবহান ও তাঁর স্বামী নজরুল ইসলাম।

এই সেই নাহিদা, যিনি প্রটোকল ভেঙে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে ফুল নিয়ে কাতার ছুটে গিয়েছিলেন জর্ডানের রাষ্ট্রদূত থাকাকালে।

জুলাই-আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের  তিনদিনের মধ্যেই জর্ডান থেকে ঢাকায় হাজির হন অতি চতুর কূটনীতিক নাহিদা। আওয়ামী লীগের আমলের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের পরামর্শ ও সহযোগিতায় মাত্র ৬ দিনের মাথায় ১২ আগস্ট তিনি কানাডা পৌঁছেন। এক সপ্তাহ টরন্টো অবস্থান করে ১৯ আগস্ট যান অটোয়ায়। 

নিয়োগ বাতিলের শঙ্কায় ছিলেন নাহিদা। রাষ্ট্রদূত পর্যায়ের তিনিই একমাত্র কর্মকর্তা, যিনি ফ্যাসিবাদ সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত এবং পতনের পরপরই অতি চতুরতার সঙ্গে পরবর্তী কর্মস্থলে যোগ দেন।