
একুশের টান বয়সের ঊর্ধ্বে, প্রজন্মের ঊর্ধ্বে। একুশের টান প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিস্তৃত হয়েছে। শুধু তা–ই নয়, এই টান গভীরতর হয়েছে, আমাদের দুঃসাহসী করেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান তারই জ্বলন্ত প্রমাণ। দুঃস্বপ্নের বাংলাদেশকে ছাত্র-জনতা নতুন বাংলাদেশে রূপান্তরিত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তারা অসম্ভবকে সম্ভব করে দিয়েছে।’
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর বাংলা একাডেমিতে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। এবারের বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’।
অনুষ্ঠানের শুরুর দিকে ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জাতির ঘাড়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে চেপে থাকা স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটেছে। আমাদের সাহসী তরুণদের এই অভূতপূর্ব আত্মত্যাগ বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। এই বিজয়ের মাধ্যমে এসেছে নতুন বাংলাদেশ গড়ার ইস্পাতকঠোর প্রতিজ্ঞা।’
জুলাইয়ের ছাত্রদের নেতৃত্বে গণ-অভ্যুত্থানে যেসব দুঃসাহসিক ছাত্র-জনতা-শ্রমিক প্রাণ দিয়েছেন এবং গুরুতর আহত হয়েছেন, তাঁদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন অধ্যাপক ইউনূস।
জুলাই অভ্যুত্থান এবারের বইমেলায় নতুন তাৎপর্য নিয়ে এসেছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান এবং তার মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের বিনির্মাণ। বরাবরই একুশে মানে জেগে ওঠা। একুশ মানে আত্মপরিচয়ের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়া। একুশ মানে অবিরাম সংগ্রাম। নিজের পরিধিকে আরও অনেক বাড়িয়ে নেওয়া। এবারের একুশের পটভূমিতে আমাদের নতুন দিগন্তে প্রতিস্থাপন করেছে। বরকত, সালাম, রফিক, জব্বারের বুকের রক্তে যে অঙ্গীকার মাখা ছিল, তাতে ছিল জুলাই অভ্যুত্থানকে নিশ্চিত করার মহাবিস্ফোরক শক্তি। অর্ধশতাব্দী পর এই মহাবিস্ফোরণ গণ-অভ্যুত্থানে দেশ পাল্টে দিল। এই বিস্ফোরণ আমাদের মধ্যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় গ্রথিত করে দিয়ে গেল। ১৭ কোটি মানুষের প্রতিজনের সত্তা এ প্রত্যয়ে গভীরভাবে গ্রথিত হলো অমর একুশের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা এই প্রত্যয়ে শপথ নিতে এসেছি।’