ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ

ছবি: ডা. এহতেশামুল হক

ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতালে সিটিস্ক্যান এর ভুল রিপোর্ট বানিয়ে, ডা. এহতেশামুল হক অপারেশনের চেষ্টা করেন। তিনি বারবার অপারেশনের কথা বলেন এবং দ্রুত ভর্তি হতে বলেন।

গত ১১ জানুয়ারি ফেনী থেকে একজন রোগী এবং রোগীর পরিবার এসে ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল এন্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টারের রেডিওলোজি ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. এহতেশামুল হককে দেখান। তিনি রোগী দেখে কিছু পরীক্ষা করতে বলেন। বিভিন্ন রক্তের পরীক্ষা ও সিটিস্ক্যান করার জন্য লিখে দেন। রোগী সব পরীক্ষা ২০ হাজার টাকা দিয়ে করার পর আবার ১৩ তারিখে ডা. এহতেশামুল হককে দেখান। তিনি দেখে বলেন এখনই মুখের ভেতরে অপারেশন করাতে হবে, আড়াই লাখ টাকা লাগবে। আজকেই ভর্তি করিয়ে দেন, এক সপ্তাহ থাকতে হবে। তিনি রোগীর পরিবারকে জোর করেন ভর্তির জন্য এবং বারবার বলেন ভর্তি হতে। এতে রোগীর পরিবারের সন্দেহ হয় তাই টাকার কথা বলে পরের দিন ভর্তি হবেন বলে চলে আসেন।

পরের দিন সকালে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে (মহাখালী) দেখাতে যান। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক রিপোর্ট ও রোগীকে দেখে সন্দেহ হওয়াতে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও তিন-চারজন ডাক্তারকে নিয়ে রিপোর্ট পর্যালোচনা ও রোগীকে দেখেন। পর্যালোচনা শেষে সেখানকার চিকিৎসক নিশ্চিত হয়ে বলেন- রোগী, রিপোর্ট ও সিটিস্ক্যান ফিল্মের মধ্যে মিল নাই। তখন রোগীর অনুরোধে ক্যান্সার হাসপাতালের চিকিৎসক রিপোর্ট রিভিউ করার জন্য লিখে দেন। রোগী আবার ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতালে আসেন এবং ডা. এহতেশামুল হককে বিষয়টি জানান। তিনি প্রথমে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন, পরে রোগীর আত্মীয়- স্বজনদের ডাকেন। এই রিপোর্টার গিয়ে কথা বললে ডা. এহতেশামুল নমনীয় হয়ে ভুল স্বীকার করেন এবং রোগীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলেন। তিনি সহকারী ম্যানেজার খান জাহানকে ডেকে রোগীর পরিবারের সামনে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলেন এবং যে ডা. রিপোর্ট করেছে, তাকে রিপোর্ট ঠিক করে দিতে বলেন।

এরপরে রেডিওলোজি ডা. একেএম মঈনুল হোসাইন রোগীকে দেখে ভালোভাবে জিজ্ঞাসা করে রিপোর্ট ঠিক করে দেন। তিনিও ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেন এবং বলেন, তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে এবং রোগীর অন্যান্য কাগজপত্র না দেখে রিপোর্ট করার জন্য কিছুটা ভুল হয়েছে। আমি এখুনি রিপোর্ট ঠিক করে দিচ্ছি। তখন তিনি নতুন রিপোর্ট তৈরি করে দেন এবং পূর্বের ভুল রিপোর্ট রেখে দেন। রোগীর পরিবার আগের রিপোর্ট দাবি করলেও কর্তৃপক্ষ দেয় নাই। ডা. মইনুল রোগীর পরিবারকে বলেন, আপনারা এখানে চিকিৎসা করালে আপনাদের জন্য বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করে দিবো। রোগী সেখানে আর চিকিৎসা করাতে না চাইলে তারা ভুল রির্পোট ও হয়রানির জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদানের কথা বলে।

দুই তিন দিন ঘুরিয়ে ১৬ তারিখে যাওয়ার পর বলেন, আমাদের কিছু ভুলভ্রান্তি আছে, আমরা ম্যানেজমেন্ট ঠিক করছি। আপনারা তো অপারেশন করান নাই, আপনাদের বেশি খরচ হয় নাই তাই শুধু সিটিস্ক্যান পরীক্ষার টাকা দিবো। রোগীর রক্তের সম্পর্কের (ছেলেমেয়ে) কাউকে নিয়ে পরে আসতে বলেন। রোগী আবার মহাখালীর সেই ডা. রকিব উদ্দিন সাহেবের কাছে গেলে তিনি বলেন, আপনাদেরকে নিয়ে সমস্যা আছে, ডা. এহতেশামুল স্যার ফোন করেছে আমাকে চুপ থাকতে বলেছেন। এখন আপনারা অন্য খানে দেখান।

পরে রোগীর পরিবার বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখাতে যান। সেখানের ডা. জুয়েল রানা সিটিস্ক্যান রিপোর্ট দেখে ২৫ জানুয়ারি আবার নোট দিয়েছেন যে রিপোর্টের এক অংশ বাকী আছে, সেটা যেন করে দেয়।

রোগী ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতালে গিয়ে বিষয়টি জানালে, সহকারী ম্যানেজার বলে- আপনারা সিটিস্ক্যানের টাকা নিয়ে যান। ম্যানেজমেন্ট বলেছে , আপনাদের টাকা দিয়ে দিতে। রোগীর পরিবার হয়রানি এড়াতে সিটিস্ক্যানের ৬৯৩০ টাকা ফেরত নিয়ে চলে আসে। তবে সিটিস্ক্যান করতে যে ২৭০০ টাকার ওষুধ লেগেছে, সেটা ফেরত দেয় নাই। এতোদিন যে মানসিক চাপ এবং হয়রানি হয়েছে, সেটার কোনো ক্ষতিপূরণ
দেয় নাই। উল্টো রোগীর পরিবারকে বলেছে, আপনারা যেখানে পারেন অভিযোগ দেন। আমাদের সমস্যা নাই।

এভাবে রোগীর সরলতা ও বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে অপ্রয়োজনীয় অপারেশন করিয়ে অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি রোগীর পরিবারের মানসিক হয়রানির দায় কে নিবে? চিকিৎসার নামে ভুল রিপোর্ট এবং অপারেশন করিয়ে অর্থ উপার্জনের এই প্রবণতার যে অভিযোগ, সেখান থেকে আমাদের হাসপাতালগুলো কবে বেরিয়ে আসবে। বর্তমান সরকার চিকিৎসা ব্যবস্থার যে সংস্কারের কথা বলছেন, সেখানে এই বিষয়টিও গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা উচিত।

উল্লেখ্য যে, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের ভুল স্বীকারের ভয়েস রেকর্ডসহ অন্যান্য যাবতীয় প্রমাণাদি এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতালের সাথে যোগাযোগ করলেও এই বিষয়ে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।