
প্রাথমিক শিক্ষকদের বেশিরভাগই যোগদানের পদবিতেই অবসরে যান। অবসর পরবর্তী সুযোগ-সুবিধার খাতাতেও তারা সহকারী শিক্ষকই থাকেন। এ নিয়ে দীর্ঘদিন হতাশা, রাগ ও ক্ষোভ চলে আসছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।
শিক্ষক পদবির দাবিতে এবং গ্রেড উন্নয়নের জন্য দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস আছে প্রাথমিকের শিক্ষদের। দাবির বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে বহুশিক্ষক হয়রানি হয়েছেন। কিন্তু, রাজনৈতিক সরকারগুলোর কানে তাদের আর্তনাদ কখনোই পৌঁছেনি।
শিক্ষকবান্ধব সরকারের দাবি করেছে যে পতিত আওয়ামী লীগ, তারাও দিনের পর দিন আশ্বাস দিয়ে গেলেও কাজের কাজটা কখনোই করেনি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী একবার ১০ম গ্রেডের ঘোষণা দিলেও বাস্তবায়ন করে নি।
অবশেষে সহকারী শিক্ষকদের সেই দুঃখ ঘোচানোর উদ্যোগ নিয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শিগগিরই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এন্ট্রি লেভেলের পদের নাম হবে ‘শিক্ষক’। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বর্তমানে সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক পদ আছে। তাই কেউ প্রধান শিক্ষক হতে না পারলে পুরো কর্মজীবন সহকারী শিক্ষক হিসেবে কাটাতে হয়। তাদের সেই নিয়তি এবার কাটছে। নতুন উদ্যোগ অনুযায়ী এন্ট্রি লেভেলে শিক্ষকরা পাবেন ১২তম গ্রেড। চার বছর পরে পদোন্নতি পেয়ে হবেন সিনিয়র শিক্ষক। বেতন পাবেন ১১তম গ্রেডে।
প্রধান শিক্ষক পাবেন দশম গ্রেড। সহকারী প্রধান শিক্ষক ১১তম গ্রেডে থাকবে তবে দায়িত্বভাতা পাবেন গ্রেড অনুযায়ী।
নাম না প্রকাশের শর্তে একাধিক কর্মকর্তা আরো জানান, বাইরে থেকে কোনো নিয়োগ বা পার্শ্বপ্রবেশ থাকবে না। প্রধান শিক্ষক হবেন শতভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে। এছাড়াও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল থাকবে। খুব শিগগিরই সরকারের তরফে এসব ঘোষণা আসতে পারে।
দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৭টি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এসব স্কুলে বর্তমানে ৩ লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষক কর্মরত।
দশম গ্রেডে বেতনের দাবিতে বেশ কয়েক মাস ধরেই সরকারি প্রাথমিকের শিক্ষকরা সমাবেশ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করেছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা।
গত ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। বর্তমানে ১৩তম গ্রেডে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের মূল বেতন ১১ হাজার টাকা।