ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় গ্রেফতার এড়াতে শত শত নেতাকর্মী এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন বলে আওয়ামী লীগ কর্মীদের থেকে দাবি করা হয়েছে। নেতাকর্মীরা তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও বন্ধ রেখেছেন। আবার কেউ কেউ মোবাইল ফোন বাড়িতে রেখে অন্যত্র পালিয়ে রয়েছেন। একান্ত প্রয়োজনে তারা পরিবারের সঙ্গে অনলাইনের বিভিন্ন প্লাটফর্মের মাধ্যমে যোগাযোগ করছেন।
আসছে পবিত্র ঈদুল ফিতরের উৎসব-আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, ১৩ আগস্টের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৬ জানুয়ারি বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এম মোশাররফ হোসেন মুশা মিয়া, আলফাডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সাইফার, উপজেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম সুজা, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শেখ দেলোয়ার হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি এনায়েত হোসেন, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক হাসমত হোসেন তালুকদার তপন, যুগ্মআহ্বায়ক কামরুল ইসলাম, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী কাওছার হোসেন টিটো ও দায়িত্বরত কয়েকজন সাংবাদিকসহ ১৭০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ২৫০০-৩০০০ জনের নামে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ও নাশকতার মামলা করা হয় আলফাডাঙ্গা থানায়। এরপর থেকে পুলিশ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করতে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছে। অজ্ঞাত আসামি থাকায় গ্রেফতার আতঙ্কে দশ হাজারের অধিক নেতাকর্মী বাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে রয়েছেন। তবে পুলিশের দাবি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কোনো রকম হয়রানি করা হচ্ছে না। যাদের নামে মামলা রয়েছে তাদেরকেই গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দাবি, আলফাডাঙ্গায় আওয়ামী লীগের কোনো ধরনের হরতাল বা অবরোধের পক্ষে কোনো মিছিল পর্যন্ত হয়নি, এমনকি কোনো ধরনের পিকেটিং বা ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেনি। অথচ বিএনপি মিথ্যা অভিযোগে একজন ভ্যান চালককে বাদি করে রুজু করা মামলায় পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীদের হয়রানি করতে, আলফাডাঙ্গা উপজেলায় শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার দাবিতে বোমা বিস্ফোরণসহ নাশকতা করা হয়েছে দেখিয়ে উপজেলার ১৭০ জন নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। উপজেলা যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী বলেন, পুলিশ আওয়ামী লীগের কর্মীদের গ্রেফতার করছে। সে কারণে কোনো অন্যায় না করেও শুধু আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি বলেই আসামির মতো পালিয়ে বেড়াচ্ছি, সামনে পবিত্র ঈদুল ফিতরের উৎসবে পরিবার পরিজন ছাড়া থাকতে হবে।
উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী কাওছার হোসেনের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে তার পরিবারের একজন নারী সদস্য কলটি রিসিভ করে বলেন, ফোন বাড়িতে রেখে বেশ কিছুদিন ধরে তিনি বাড়িতে নেই। কোথায় আছেন তাও জানি না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দাবি তাদেরকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে হয়রানি করা হচ্ছে। এ ছাড়া আলফাডাঙ্গায় দায়িত্বরত কয়েকজন সাংবাদিককে আসামি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করায় তারাও আত্মগোপনে রয়েছেন। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে না পারার কারণে কর্মক্ষেত্রসহ পারিবারিক নানান সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন বলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আলফাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ হারুন অর রশিদ বলেন, ২০২৪ সালের ১৩ আগস্ট নাশকতা সৃষ্টি ও বিস্ফোরণের ঘটনায় লাবলু সর্দার নামে একজনের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু হয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই মামলা হয়েছে। তালিকাভূক্ত আসামিদের গ্রেফতার এখনো অব্যাহত রয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই তাদেরকে হয়রানি করা হবে না।